
আওয়ামী লীগের করা আইন দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যার বিচার করা যাবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, শুধু ছাত্র-জনতা হত্যাকান্ডের বিচার নয়, এযাবৎকালের সব হত্যার বিচার করতে হবে। রোববার রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের চরমপন্থি ও সন্ত্রাসী দল উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান এদের চেয়ে বড় সন্ত্রাসী আর কেউ ছিল না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডব চালিয়ে বাংলাদেশের মানবতা, গণতন্ত্রকে এবং জনগণের ইচ্ছা ও আশা-আকাঙক্ষাকে জবাই করা হয়েছিল। ঐদিনই সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। তিনি বলেন, মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত ছাড়া বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মজলুম ছিলেন। আর মজুলুমদের সামনের কাতারে ছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বৈষ্যমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের পিতা মো. গোলাম রাজ্জাক। সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য আব্দুর রব,কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা, ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা.ফখরুদ্দিন মানিক, মহানগরী উত্তর শিবির সভাপতি আনিসুর রহমান, পশ্চিমের সভাপতি সালাহ মাহমুদ প্রমুখ।
দীর্ঘ সাড়ে ১৭ বছর বহু ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশ আবার আপন পথ ফিরে পেয়েছে উল্লেখ করে জামায়াত আমির আরো বলেন, যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তারা কোনো অপরাধ করেননি। তারা জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশে এসেছিল। তারা কাউকে আঘাত করেনি। সম্পূর্ণ গায়ের ওপর পড়ে তাদেরকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। মাটিতে পড়ে যাওয়া লাশগুলোর ওপর পাষাণরা সেদিন দাঁড়িয়ে নাচানাচি করেছিল।
ছাত্রলীগ নামে হাতুড়ি-হেলমেট বাহিনী তৈরি করেছিল আওয়ামী লীগ জানিয়ে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেররা অহংকার ও অন্যায় নিয়ে গর্ব করতেন। তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। মানুষকে মানুষ মনে করতেন না। আজ তারা কোথায় গেলেন। প্রতিটি অপকর্মের ফল তাদের পেতে হবে।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী কোনো প্রতিশোধ নেবে না, তবে জুলুমের শিকার প্রতিটি মানুষকে ন্যায়বিচার দেবে। বিপ্লবের পর জামায়াতকর্মীরা চাঁদাবাজি কিংবা দখলবাজি করেনি। বরং মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। ডা. শফিকুর বলেন, সাড়ে ১৫ বছর দাপটের সাথে তারা দেশ শাসন করেছেন। ক্ষমতায় আসার মাত্র ২ মাসের মাথায় দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর গায়ে তারা আঘাত করে ৫৭ জন চৌকস ও দেশপ্রেমিক, প্রতিশ্রুতিশীল সেনা কর্মকর্তাকে বেদনাদায়কভাবে হত্যা করেছিল। জামায়াতের আমির বলেন, বিডিআর হত্যাকান্ডের পর তারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর আঘাত দিতে শুরু করে। কারণ, তারা জানত জামায়াত দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব কারে কাছে বিলিয়ে দিতে রাজি হয়নি। বিক্রি করতে রাজি হয়নি এবং কোনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করেনি। তাই তারা তিলে তিলে গড়ে ওঠা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচারিক হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছে। বর্তমানে রাজপথের স্লোগান হলো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’-জামায়াতের স্লোগানও ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, স্বৈরাচারি শাসন কখনো স্থায়ি হয় না। আওয়ামী লীগ টিকতে পারেনি। তারা দেশে দেড় দশক ধরে অপশাসন- দুঃশাসন চালিয়ে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে ক্ষমতা থেকে লজ্জা জনকভাবে বিদায় নিয়েছে। ছাত্র-জনতার দুর্বার আন্দোলনে টিকতে পারেনি। মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বীরের জাতি। তাই আমাদেরকে কেউ কখনো পরাভ‚ত করতে পারেনি; আর কখনো পারবেও না। দেশে দীর্ঘ মেয়াদে ফ্যাসীবাদী এবং স্বৈরাচারি শাসন চলেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে চিরস্থায়ি করার জন্য দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসীবাদের শেষ রক্ষা হয়নি। সভাপতির বক্তব্যে মোহাম্মাদ সেলিম উদ্দিন বলেন, দেশকে ফ্যাসীবাদ মুক্ত করতে আমাদেরকে অনেক ত্যাগ ও কোরবানী করতে হয়েছে।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রকাশ্য দিবালোকে লগি-বৈঠার তান্ডব চালিয়ে মাসুম, শিপন, মুজাহিদ, জসিম উদ্দীন সহ ৭ জনকে শহীদ করে লাশের ওপর নৃত্য চালিয়ে নির্মম পৈশাচিকা প্রদর্শন করা হয়েছিল। কথিত বিচারের নামে প্রহসন করে শীর্ষনেতাদের হত্যা সহ শত শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি বরং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে।